ঢাকা, বাংলাদেশ ২৪ মে, ২০২৫

আশুলিয়ায় ২৫ কারখানায় সাধারণ ছুটি

আশুলিয়ায় ২৫ কারখানায় সাধারণ ছুটি

সংগৃহীত

Publish : 01:11 AM, 14 December 2024.
নিজস্ব প্রতিবেদক :

সরকার ঘোষিত বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পরিমাণ চার শতাংশ বৃদ্ধি প্রত্যাখ্যান করে ১৫ শতাংশ করার দাবিতে আন্দোলন করছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতির মুখে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আশুলিয়ার অন্তত ২৫টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিশৃঙ্খলা এড়াতে শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকাসহ এর আশপাশের এলাকার এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার ঘোষিত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট চার শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা ১৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানান শ্রমিকরা। 

শিল্প পুলিশ ও ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা গেছে, হা-মীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার, নেক্সট কালেকশন, আল মূসলীম, সেতারা গ্রুপসহ বেশকিছু কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সকালে এসে ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ রাখেন। নিউ এইজ, ডেকো, এথিক্যালসহ অন্য কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও কাজ বন্ধ করে ফ্লোরে বসে থাকেন। শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে নাসা ও ট্রাউজার লাইন শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। এ ছাড়া ব্যান্ডো ডিজাইন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। হা-মীম ও নিট এশিয়ার শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে যান।

শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পরিমাণ বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। 

তিনি জানান, স্টারলিং নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ছাড়া হামিম গ্রুপ, শারমিন, মেডলার, আল-মুসলিম, নেক্সট কালেকশনসহ অন্তত ২৫টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বার্ষিক বেতন-ভাতা বাড়ানো, অর্জিত ছুটির বকেয়া টাকা প্রতিমাসে পরিশোধসহ সাত দফা দাবি জানিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন।

গত সোমবার পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির হার পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে নয় শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে।

সরকার, কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, চলতি ডিসেম্বর থেকে নয় শতাংশ হারে মজুরি বাড়বে, যা জানুয়ারি মাসে পাবেন শ্রমিকরা। বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সবশেষ সংশোধিত শ্রম আইন অনুযায়ী অন্য সুবিধাও মিলবে। তবে সরকারের নয় শতাংশ বেতন বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন আশুলিয়ার বেশ কিছু কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা।

ওমর ফারুক নামে এক শ্রমিক বলেন, আমাদের এত অল্প বেতনে হয় না, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাই বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য আমরা দাবি করছি। এ ছাড়া বেতন প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে দিতে হবে।

আশুলিয়ায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, নতুন বছরের জন্য সরকার চার শতাংশ ইনক্রিমেন্টের ঘোষণা দিয়েছে। তবে তাদের দাবি ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া আরো ছয়টি দাবি রয়েছে।

সেগুলো হচ্ছে- ২০২৪ সালের অর্জিত ছুটির টাকা ডিসেম্বরের মধ্যেই পরিশোধ ও যোগদানের তারিখ থেকে ওই ছুটির টাকা দেওয়া। তিনদিন ছুটি পাশ করলে হাজিরা বোনাস দেওয়া ও মেডিক্যাল ছুটি দিলে কোনো রকম হাজিরা বোনাস না কাটা; ১০০ শতাংশ গ্রেড দেওয়া। রমজান মাসে কোনো জেনারেল ডিউটি না করানো। রমজানে আট ঘণ্টার বেশি ডিউটি করালে ইফতারির জন্য ১২০ টাকা করে দেওয়া; আন্দোলনরত কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা যাবে না; আন্দোলনকারী বা অন্য কোনো শ্রমিক স্ব ইচ্ছায় চলে গেলে সেই শ্রমিকের ফিঙ্গার ব্লক বা ক্রোস চিহ্ন দেওয়া যাবে না। শ্রমিকরা চাকরি ছেড়ে নিলে শেষ কর্মদিবসে তার সব পাওনা নগদ দিয়ে দেওয়া।

মাইনুল ইসলাম নামে আন্দোলনকারী আরেক শ্রমিক বলেন, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে বেতন সামঞ্জস্য না থাকায় বার্ষিক বেতন-ভাতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই ১৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে।

বুধবার বিকালে শিল্প পুলিশের সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, বার্ষিক বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কয়েকটি পোশাক কারখানা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে অন্য শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।

মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, দুএকটি গার্মেন্টসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ছাড়া বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিল্পাঞ্চলে অতিরিক্ত শিল্প পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। যৌথবাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

পিপলনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

অর্থনীতি বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd