ঢাকা, বাংলাদেশ ২৪ মে, ২০২৫

চিকিৎসায় ভারতের বিকল্প গন্তব্যে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা

চিকিৎসায় ভারতের বিকল্প গন্তব্যে যাচ্ছে বাংলাদেশিরা

কলকাতার একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ- ফাইল ছবি

Publish : 12:19 AM, 10 December 2024.
পিপলনিউজ ডেস্ক :

বিগত অনেকটা সময় বাংলাদেশিদের ঘোরাঘুরি ও চিকিৎসা গ্রহণের প্রধান গন্তব্য ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বদলে যায় দৃশ্যপট। দুই দেশের মধ্যে এখন উত্তেজনা চলছে। গুরুতর রোগী ছাড়া বাংলাদেশিদের মেডিক্যাল ভিসা দিচ্ছে না ভারত। এতে বাংলাদেশিরাও খরচ ও চিকিৎসা মান বিবেচনায় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও তুরস্কের দিকে ছুটছেন।

ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। এতে ভারতে স্বাস্থ্যসেবা নিতে তাদের বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে ছয় হাজার কোটি টাকা) ব্যয় হয়। ভারতে যত বিদেশি নাগরিক চিকিৎসা করাতে আসেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই সর্বাধিক।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব ভারতের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সংগঠন জানাচ্ছে, বাংলাদেশের রোগী আসা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। যেসব হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল, তাদের কাছে এটি বড় ধাক্কা।

তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরা নয়, বাংলাদেশি রোগী আসা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় ভারতের সব হাসপাতালেই তার প্রভাব পড়ছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ও কলকাতার উডল্যান্ডস হসপিটালের প্রধান নির্বাহী অফিসার রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘আগে প্রতি মাসে গড়ে ভারতের মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হতো ২০ থেকে ২৫ হাজার। এখন সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে এক হাজার। তা-ও মূলত নতুন রোগী নয়, পুরোনো রোগী। যাদের চেকআপ ইত্যাদি আছে, তারাই ভিসা পাচ্ছেন। তাই পুরো ভারতের হাসপাতালশিল্পের ওপরই বড় ধাক্কা এসেছে।’

ভারতের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল গোষ্ঠী মনিপাল হসপিটালসের পূর্বাঞ্চলীয় চিফ অপারেটিং অফিসার ডা. অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, ‘এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে সেখান থেকে বহু রোগী ভারতের হাসপাতালগুলোতে আসতে পারছেন না। আমাদের হাসপাতালগুলোতেও বহির্বিভাগ এবং রোগী ভর্তি কমে গেছে।’

বাংলাদেশি রোগীরা সাধারণত ট্রান্সপ্লান্ট, কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, অর্থোপেডিকস ও অনকোলজির মতো চিকিৎসার জন্য ভারতে যান।

বাংলাদেশের রোগী যারা আগে চিকিৎসার জন্য ভারত যেতেন, সেই রোগীরাই এখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তুরস্কে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১২ থেকে ২১ লাখ রুপির ব্যবসা কম হচ্ছে বলে ভারতীয় পত্রিকা ‘এই সময়’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতীয় ভিসা পেতে জটিলতা এবং রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে চিকিৎসা ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে মালয়েশিয়া। দেশটির উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী খরচ, সহজ ভিসাপ্রক্রিয়া এবং হালাল-বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ— এই পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে।

দেশটির হাসপাতালগুলোর দাবি, ক্যানসার, হৃদরোগ, হেলথ স্ক্রিনিংসহ বিভিন্ন জটিল রোগ নির্ণয় ও নির্মূলে ব্যবহার হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। তাই মালয়েশিয়ার চিকিৎসা এখন বিশ্বসেরা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সেবাগ্রহণকারীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিতে মালয়েশিয়া হেলথ কেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিল (এমএইচটিসি) কাজ করছে।

সম্প্রতি বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবায় মালয়েশিয়া প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ঢাকার মালয়েশিয়ার হাইকমিশন জানায়, তাদের চিকিৎসা খরচ থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে অন্তত ৭০ শতাংশ কম। তবে ভারতের চেয়ে কিছুটা বেশি। অবশ্য মালয়েশিয়ায় চিকিৎসকদের জবাবদিহির ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসা পেতে কেউ ভোগান্তির শিকার হলে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয় দেশটির সরকার।

ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় মালয়েশিয়া অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বিশেষ সেবার ব্যবস্থা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে হালাল-বন্ধুত্বপূর্ণ থাকার ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল যত্ন। এ ছাড়া সহজ ভিসাপ্রক্রিয়া, শক্তিশালী যাতায়াতব্যবস্থা এবং সরকারের উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে মালয়েশিয়াকে একটি মেডিক্যাল ট্যুরিজম কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, যা বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিবর্তনটি দক্ষিণ এশিয়ার মেডিক্যাল ট্যুরিজম খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে। যার বড় সুবিধাভোগী হিসেবে উঠে এসেছে মালয়েশিয়া। এই পরিবর্তনটি প্রমাণ করে, আঞ্চলিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি কীভাবে বৈশ্বিক ট্যুরিজম খাতকে প্রভাবিত করে।

মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা নেন প্রায় সাড়ে আট লাখ বিদেশি। সবচেয়ে বেশি সেবা নেন অস্ট্রেলিয়ান; দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশিরা।

মালয়েশিয়ার পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও তুরস্কমুখীও হচ্ছেন রোগীরা। ব্যাংককভিত্তিক একটি মেডিক্যাল ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান জানায়, তাদের কাছে এখন চার মাস আগের তুলনায় ২০০ শতাংশ বেশি ফোনকল ও মেসেজ আসছে। ৮০ শতাংশের বেশি রোগী বলছেন, তাদের ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে যেতে পারেননি। তাই তারা থাইল্যান্ডে আসতে চান।

পিপলনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd