ঢাকা, বাংলাদেশ ২৪ মে, ২০২৫

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট

সংগৃহীত

Publish : 04:52 AM, 08 December 2024.
নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজধানীর মুদির দোকানগুলোতে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। সরকারের আমদানি শুল্কছাড়ও কাজে দিচ্ছে না। দিন দিন ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে।

জানা গেছে, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোজ্য তেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর ১০ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমার কথা থাকলেও সেই চিত্র কোথাও নেই।

মিরপুরের মুসলিম বাজারে পাঁচটি মুদি দোকান ঘুরে দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পেরেছেন সত্তরোর্ধ্ব সায়ীদ মালিক। তা-ও গায়ের দামের চেয়ে ছয় টাকা বেশি দিয়ে কিনেছেন ৩৪০ টাকায়। রূপনগর এলাকার এই বাসিন্দা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সয়াবিন তেলের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরতে হলো। বাজারে তেল নাই, এটা তো বাসায় বোঝে না। যেভাবেই হোক তেল নিতে হবে। তেল না থাকলে রান্না হবে না। পরিচিত দোকানেও তেল পেলাম না।’

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে যারা বাজারে গিয়েছেন ভোজ্যতেল না পেয়ে তাদের অনেকেই হতাশ। অনেকে খালি হাতেই ফিরছেন বাসায়। হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে মিলছে দু-একটি কোম্পানির সয়াবিন তেল। সেখানেও হাঁকানো হচ্ছে বাড়তি দাম। 

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত এক সপ্তাহ বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট সবচেয়ে বেশি। ফলে বিক্রেতারা পর্যাপ্ত তেল পাচ্ছেন না। কোনো কোনো বিক্রেতার অভিযোগ, রমজান মাস শুরুর আগে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আরো এক দফা দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করে নিতে চাইছে কোম্পানিগুলো।

মিরপুর ১২ নম্বরে মুসলিম বাজারের পাঁচ-ছয়টি মুদি দোকান ঘুরেও মেলেনি সয়াবিন তেল। আলিমুদ্দিন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, কোম্পানি রেট বাড়াবে, এখন সাপ্লাই বন্ধ। দু-তিনদিন ধরে কোনো সয়াবিন তেল বাজারে ঢুকছে না।

সরকার দফায় দফায় শুল্ক-কর কমালেও সয়াবিন তেলের আমদানি বাড়েনি। অন্য একজন বিক্রেতা জানান, অনেক দোকানে সয়াবিন তেল নেই। অনেকেই আবার মজুত করছেন, যেন দাম বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। এসব কারণে ভোজ্যতেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ক্রেতারা দোকানে এসে তেল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

কয়েকটি দোকানে প্যাকেটজাত সয়াবিন পাওয়া গেছে। সেই দোকানগুলোতে নির্ধারিত দামে বা কিছুটা বাড়তি দামে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রূপচাঁদা এক লিটার সয়াবিন তেলের গায়ের রেট ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮১৮ টাকা। বেশিরভাগ দোকানে এ দামের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা।

বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি পাম ও সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর ১০-১১ টাকা কমানো হয়। কিন্তু এতেও আমদানি বাড়েনি। বরং বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট সবচেয়ে বেশি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা চাহিদার ১০ শতাংশ তেলও পাচ্ছেন না। উল্টো দাম বাড়েছে লিটারপ্রতি অন্তত পাঁচ টাকা।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল নেই। কিছু দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল থাকলেও তা খুবই সীমিত। এক বা তিন লিটারের বোতল একেবারেই নেই। অনেকে দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। সেখানেও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত দাম। কিছু ক্ষেত্রে খোলা বা লুজ তেল বিক্রির অভিযোগ মিলেছে।

দোকানিরা বলছেন, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬০-১৬২ এবং সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও ৫ লিটার ৮১৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিলাররা তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তেল কেনার জন্য আটা-ময়দার বস্তা কেনার শর্তজুড়ে দিচ্ছেন।

অন্যদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল সরবরাহ কমেছে বলে দাবি তেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারের হিসাবে লিটারে ১০-১৩ টাকা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের মতো।

তবে আমদানিকারকদের এমন দাবির সঙ্গে একমত নন ভোক্তারা। সানমুন নামের একজন ক্রেতা বলেন, তেল আমদানি হয়েছে তিন-চার মাস আগে। অথচ এখন বলা হচ্ছে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। এটি আসলে অযৌক্তিক কথা।

তিনি বলেন, কর ও শুল্ক কমানোর পরও তেলের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। এখন আবার নতুন করে দাম বাড়ানোর পায়তারা চলছে। সরকারের শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম গণমাধ্যমে জানান, সরকার শুল্ক-কর যা কমিয়েছে, তার চেয়ে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে বেশি। কোম্পানিগুলো লোকসানের ঝুঁকিতে থাকলেও সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে সরবরাহ বাড়িয়েছে।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেড়েছে। স্থানীয় বাজারে দাম বাড়াতে আমরা ১০ দিন আগে ট্যারিফ কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত এলে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো।

কোনো পণ্যে ওপর শুল্ক-কর কমানো মানে ওই পণ্যের আমদানি বাড়বে এবং দাম কমবে। গত অক্টোবরে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে দুই দফায় শুল্ক-কর কমায় সরকার। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ক-কর কমানো হয়। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দেশে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে এই আমদানির পরিমাণ ছিল চার লাখ ৬০ হাজার টন। সে হিসাবে আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এ ছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এবার আমদানিকারকের সংখ্যাও কমেছে।

মেঘনা কোম্পানির ডিলার মেসার্স জামান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘কোম্পানি থেকে মাল দিচ্ছে না। দিনে চাহিদা ১০০ কার্টন। আগে সেভাবেই বিক্রি হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার ৮০ কার্টন তেল পেয়েছি। এক কার্টনে থাকে ২০ লিটার তেল। এটা পাওয়া না পাওয়া সমান কথা। এভাবে ব্যবসা করা যায় না।’ 

সিটি গ্রুপের ডিলার এটিএন এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী সেলিম রায়হানও তেল না থাকার তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘তেল কিছু পাচ্ছি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। তাই বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। তিন-চার দিনে এক গাড়ি তেল লাগে। পাওয়া যাচ্ছে ৮০ কার্টন। এ জন্য সবাই পাচ্ছে না।’

পিপলনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

অর্থনীতি বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd