ঢাকা, বাংলাদেশ ২৪ মে, ২০২৫

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ

সংগৃহীত

Publish : 12:14 AM, 17 December 2024.
নিজস্ব প্রতিবেদক :

একাত্তরে নির্মমভাবে নিহত জাতির শ্রেষ্ঠ ও সূর্যসন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামে। জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে নানা বয়সী, নানা পেশার হাজারো মানুষ আসেন স্মৃতিসৌধে। তাদের অনেকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধেও যান। 

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এ দেশীয় রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের সহায়তায় পাক সেনাদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন দেশের বরেণ্য শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিল্পীসহ জাতির মেধাবী সন্তানেরা। পরে তাদের লাশ রাজধানীর রায়েরবাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি বধ্যভূমিতে ফেলে দেওয়া হয়।

পরাজয় আসন্ন বুঝতে পেরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দেশীয় দোসররা দেশকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করার লক্ষ্যে এই গণহত্যা চালায়। সেই স্মৃতিকে অমর করে রাখতেই প্রতিবছর পালিত হয় দিবসটি।

দিনের শুরুতে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। 

শনিবার প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সর্বপ্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার দেয় তিন বাহিনীর একটি দল।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা শনিবার সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

দেখা গেছে, স্মৃতিসৌধের ভেতর থেকে বাইরে পর্যন্ত মানুষের দীর্ঘ লাইন। এসময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্মৃতিচারণ করেন। অনেকেই কবরের পাশে চোখের পানি ফেলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অনেক সাধারণ মানুষকেও শহীদদের কবরের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আবার অনেককে ফাতেহা পাঠ করে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করতে দেখা গেছে। পরে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন,  বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ছাত্র সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।  

বাড্ডা থেকে নিজের শিশুকন্যাকে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছিলেন সরকারি চাকরিজীবী শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে এই দেশের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। তাই এখানে এসেছি, যাতে এটি তাদের মননে গেঁথে যায়। বুদ্ধিজীবীরা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।

মিরপুর-১ থেকে এসেছিলেন জাহিদুল ইসলাম। হাতে ফুল নিয়ে সঙ্গে স্ত্রীকেও নিয়ে আসা জাহিদ বলেন, একাত্তরে জাতির বুদ্ধিজীবী এবং মেধাবীদের ঘর থেকে ডেকে নিয়ে এনে নির্মমভাবে গণহত্যা চালানো হয়। সেই স্মৃতির বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতেই আজ এখানে এলাম আমরা।

রাজধানীর শ্যাওরাপাড়া থেকে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান। তিনি বলেন, আমি মনে করি ওই সময়ে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছিল একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল। জাতিকে মেধাশূন্য করার এক গভীর চক্রান্ত ছিল এই হত্যাকাণ্ড। সেই নির্মম ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখতেই আজ এখানে আসা।

আগারগাঁও তালতলা এলাকা থেকে আসা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনতাহা তাবাসসুম এসেছিল বাবার সঙ্গে। মুনতাহা বলে, বইয়ে আমরা পড়েছি এই বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে। তাই বাবার সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। গতবারও আমি এসেছিলাম।

দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া, দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। এ ছাড়া সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে হয় বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা।

এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআন খানি ও আলোচনা সভা এবং  বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান।

পিপলনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

জাতীয় বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd