সংগৃহীত
সামরিক আইন জারি করে বিপাকে পড়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে সরাতে দ্বিতীয় দফার অভিশংসন প্রস্তাবে সায় দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট।
বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিরোধীদলের নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্টে আনা দ্বিতীয় দফা অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়, এতে ২০৪ জন সদস্য অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। একে জনগণের জয় হিসেবে অভিহিত করেছে বিরোধীরা।
এই ভোটাভুটিতে ইউনের ক্ষমতাসীন পিপলস পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) কিছু সদস্য বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে যোগ দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ৩০০ সদস্যের আইন পরিষদে বিরোধীদলগুলোর নিয়ন্ত্রণে আছে ১৯২টি আসন। পিপিসির কিছু সদস্য প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় অভিশংসন জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন নিশ্চিত হয়।
অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন ২০৪ জন আইনপ্রণেতা, প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিলেন ৮৫ জন, আটটি ভোট বাতিল হয় এবং তিনজন ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন; জানিয়েছে রয়টার্স।
অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতে ২০০ ভোট প্রয়োজন হয়। এ জন্য প্রস্তাবটি পাস করাতে ইউনের নেতৃত্বাধীন পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) আটজন পার্লামেন্ট সদস্যকে পক্ষ পরিবর্তনের জন্য রাজি করানোর প্রয়োজন ছিল।
অভিশংসন প্রস্তাব পাস হওয়ায় ইউন এখন সাময়িকভাবে বরখাস্ত অবস্থায় থাকবেন। এ সময় দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত পার্লামেন্টের ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। ইউনের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য আদালতের হাতে ১৮০ দিন সময় আছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সু অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করবেন।
পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাবে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগে থেকে দেশটির রাজধানী সিউলের রাস্তায় হাজারো বিক্ষোভকারী জড়ো হন। ইওলকে অভিশংসনের চেষ্টায় পার্লামেন্টে ভোটাভুটিকে সামনে রেখে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। সিউল পুলিশের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ইওলকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে শনিবার কমপক্ষে দুই লাখ বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামেন।
ইয়ু হি জিন নামে ২৪ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘ইউনকে যদি আজ (শনিবার) অভিশংসন না করা হয়, আমি আগামী সপ্তাহে আবার এখানে ফিরে আসব। এটি (অভিশংসন) না হওয়া পর্যন্ত আমি আসতেই থাকব।’
এদিকে সিউলের গোয়াংওয়ামুন স্কয়ারের কাছের একটি এলাকায় ইউনের সমর্থনেও হাজারো মানুষ সমবেত হন। তারা বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান বাজাতে থাকেন এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ওড়ান।
গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছিলেন ইউন। যদিও জনগণের চাপের মুখে ছয় ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন তিনি। তার এই পদক্ষেপের কারণে দেশটির জনগণ হতবাক হয়ে পড়ে। তার নিজ দলের মধ্যেও বিভক্তি তৈরি হয়। মেয়াদের অর্ধেক পথে এসে ঝুঁকির মুখে পড়ে তার প্রেসিডেন্ট পদ।
ইউন সুক-ইওল সামরিক শাসন জারির পর তার অভিশংসনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন মানুষ। সেনাবাহিনী ও পুলিশকে উপেক্ষা করেই বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টে অভিশংসন ভোট হয়। তবে সে ভোটে তিনি উতরে যান।
পরে নিজের সিদ্ধান্তের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চান তিনি। কিন্তু একইসঙ্গে নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়ে পদত্যাগের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ‘শেষ পর্যন্ত লড়াই করার’ প্রত্যয় জানান তিনি। যদিও বিষয়টি দক্ষিণ কোরিয়াকে সাংবিধানিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। আইন ভঙ্গের কারণে দেশজুড়ে তার পদত্যাগের ব্যাপক দাবি উঠছে।
পিপলনিউজ/আরইউ
ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com