ঢাকা, বাংলাদেশ ২৪ মে, ২০২৫

সিরিয়ার গোলান মালভূমির বাফার জোন ইসরায়েলের দখলে

সিরিয়ার গোলান মালভূমির বাফার জোন ইসরায়েলের দখলে

সংগৃহীত

Publish : 01:17 AM, 11 December 2024.
নিজস্ব প্রতিবেদক :

সিরিয়ায় দুই যুগের শাসন শেষে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে। মাত্র ১২ দিনের এক অভ্যুত্থানে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) দেশটির দখল নেয়। 

এদিকে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় ইরান ও রাশিয়ার মিত্র আসাদ সরকারের পতন হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সর্বশেষ আসাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা মস্কো রয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস।

অবশ্য আসাদ রাশিয়ায় আছেন কিনা, তা নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ক্রেমলিন। উল্টো বলেছে, বিদ্রোহীরা দেশটি দখলে নেওয়ার ঘটনায় তারা হতবাক।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাশার আল-আসাদ কোথায় আছেন, সে বিষয়ে আপনাদের বলার মতো কিছু আমার কাছে নেই। 

এদিকে সিরিয়ার আসাদের পতনের পর দেশটির ভূখণ্ড দখলে নিচ্ছে ইসরায়েল। দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছে জায়ানবাদি রাষ্ট্রটি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, তার সেনাবাহিনী গোলান মালভূমির অসামরিক বাফার জোন সাময়িকভাবে দখলে নিয়েছে। সর্বশেষ হারমন পর্বতের সিরিয়ার অংশের দখল নিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

এদিকে ১৯৭৪ সালে সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের হাতে দেশটির নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার কারণে তা ভেঙে পড়েছে বলে জানান নেতানিয়াহু। 

নেতানিয়াহু বলেন, গোলান মালভূমিতে ইসরায়েল অধিকৃত এলাকা থেকে বাফার জোন এবং আশপাশের কমান্ডিং অবস্থানগুলোতে ঢোকার জন্য তিনি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের সীমান্তে কোনো বৈরী শক্তিকে অবস্থান নিতে দেব না।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, গত শনিবার বাফার জোনের ভেতরে অবস্থিত কুনেইত্রা প্রদেশে সিরীয় সেনারা তাদের অবস্থান ত্যাগ করেছে।

রবিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বাফার জোনের ভেতরে থাকা পাঁচটি সিরীয় গ্রামের বাসিন্দাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের বাড়িতে থাকতে বলেছে।

গোলান মালভূমি দামেস্ক থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বলে জানিয়েছে বিবিসি।

১৯৭১ সাল থেকে বাশার আল–আসাদ এবং তার বাবা দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন। রবিবার ভোরে ইসলামপন্থি বিদ্রোহী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন গোষ্ঠী দামেস্কে ঢুকে পড়ে।

এরপর তারা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হয়ে ‘সিরিয়া এখন মুক্ত’ বলে ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গোলান মালভূমির বাফার জোন দখলের পদক্ষেপ নিল ইসরায়েল।

বিবিসি-র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধ শেষে গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল। এরপর, ১৯৮১ সালে তারা এটিকে একতরফাভাবে নিজেদের অংশ বলে ঘোষণা করে।

তবে ইসরায়েলের এ পদক্ষেপ কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। যদিও ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দেয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আসাদ সরকারের পতনের দিনটিকে ঐতিহাসিক দিন বলে উল্লেখ করেছেন।

নেতানিয়াহু বলেন, দামেস্কে স্বৈরশাসক আসাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে ঠিকই, তবে এতে বিপদও আছে।

নেতানিয়াহুর দাবি, ইরানে এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের হামলার কারণে সিরিয়ায় ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে গেল। 

বাশার ও তার পরিবার মস্কোতে 

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে পৌঁছেছেন। ক্রেমলিনের সূত্র উল্লেখ করে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবরে বলা হয়েছে, মানবিক দিক বিবেচনা করে আসাদ ও তার পরিবারকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়া।

ক্রেমলিনের একটি সূত্র বলেছে, রাশিয়া সবসময় সিরিয়ার সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে ছিল। আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আলোচনার পুনরারম্ভের জন্য জোর দিচ্ছি।

তাসের খবরে আরো বলা হয়েছে, রাশিয়ার কর্মকর্তারা সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিদ্রোহীরা সিরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে।

এদিকে, সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান করেছে রাশিয়া। 

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, কূটনৈতিক সূত্রগুলো বৈঠকের সময় নিশ্চিত করেছে। পলিয়ানস্কি বলেন, আসাদ সরকারের পতনের গভীরতা এবং এর প্রভাব রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য কী হতে পারে, তা এখনই বলা কঠিন।

তিনি আরো জানান, গোলান মালভূমির জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলে ইসরায়েলের সাময়িক দখল নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

দিমিত্রি পেসকভ যা বললেন

এদিকে রবিবার ক্রেমলিনের সূত্রের বরাত দিয়ে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছিল, বিদ্রোহী যোদ্ধারা দামেস্কে ঢুকে পড়ার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাশার তার পরিবার নিয়ে পালিয়ে মস্কো চলে যান। মানবিক কারণে রাশিয়া তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। বাশারের ছেলে মস্কোয় পড়াশোনা করেন।

দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়া যদি বাশার ও তার পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে থাকে, তবে তা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সিদ্ধান্তেই হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই রাষ্ট্রের প্রধানের সিদ্ধান্ত ছাড়া হতে পারে না এবং এটি তার (রাষ্ট্রপ্রধান) সিদ্ধান্তেই হতে হবে।

রাশিয়া এখন পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত বেশ কয়েকজন নেতাকে আশ্রয় দিয়েছে। এর মধ্যে আছেন ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ।

গত কয়েক দিনে সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে পেসকভ বলেন, ক্রেমলিনও এ ঘটনায় হতবাক হয়েছে। তিনি বলেন, যা ঘটেছে, তাতে পুরো বিশ্ব অবাক হয়েছে, আমাদের ব্যতিক্রম হয়নি।

সিরিয়ায় রাশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সেনা ও নৌঘাঁটি আছে। ২০১৫ সালে তারা বাশার সরকারের পক্ষ নিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো শুরু করে। পেসকভ বলেন, অস্থিরতার কারণে এখন একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

এখন রাশিয়ার সেই ঘাঁটিগুলোর কী হবে, জানতে চাইলে পেসকভ বলেন, এখনই কিছু বলার মতো সময় হয়নি। সিরিয়ায় যারা ক্ষমতায় যাবে, তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় এটি।’ তিনি বলেন, এই ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেসকভ আরো বলেন, যারা এই নিরাপত্তা দিতে পারবে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আমরা সম্ভাব্য এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু করছি। পাশাপাশি আমাদের সামরিক বাহিনীও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

পিপলনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

আন্তর্জাতিক বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd