অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, স্বৈরাচারের আমলে দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর আইডিইবি ভবনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সবায় তিনি এ কথা বলেন।
বিচার না হওয়ায় দুর্নীতি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, দুর্নীতি একটা গ্রহণযোগ্য মবে পরিণত হয়েছিল। কেউ কোনও প্রশ্ন করতো না। অবৈধ বিত্ত নিয়ে গর্ব করতো। বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজ-কর্মকর্তা কর্মচারী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কোন বিচার করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি যে খারাপ জিনিস এটা মনে করার সংস্কৃতি পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা দেখলাম একজন বেহায়া প্রধানমন্ত্রী তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে হাসতে হাসতে জাতির সামনে বলছেন। গত ১৫ বছর আমরা দেখেছি, ১০০ টাকার বালিশ চার হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনী হয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকায় এক সময় ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত এক লোক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
তিনি বলেন, দেখা হলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলতেন আপা তো কিছু করতে পারতেন না ওনার ছোট বোনের জন্য। বোনের প্রতি কী মায়া। বিভিন্ন আড্ডায় শুনতাম শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার কে, শেখ রেহানার ক্যাশিয়ার কে। সালমান তার ক্যারিয়ার। জয়ের টাকা কার মাধ্যমে যায়। পলক কার ক্যাশিয়ার। সবাই শুনেন নাই? দুদক ছিল, উচ্চ আদালত ছিল। কোনও বিচার হয়েছে? কোনও বিচার হয় নাই। দুর্নীতিবাজদের দোয়া কবুল হয় না। সেজন্য বলি, চোরেরা, দুর্নীতিবাজরা কোন বিশ্বাসে নামাজ পড়তে আসে। তার নিজের ফ্ল্যাটের নাম জারি করতে গেলে দশ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে বলেও জানান আসিফ নজরুল।
একজন সাংবাদিক ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া থাকতো। পরে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে ঢাকা ক্লাবের মেম্বার হয়েছে। অনেকে আমার গরিব পোশাক নিয়ে হাসাহাসি করতো। আমাকে বোকা ভাবতো। দুর্নীতি করার মধ্যে কোনও লজ্জাবোধ ছিল না। তাই বছরের প্রতিটি দিন আমাদের মনে রাখা উচিত, দুর্নীতি দেশে বৈশম্য সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, রুখে দাড়াতে হবে। নিজে বিরত থাকতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, সৎ প্রজন্ম তৈরি করতে পারলে দুর্নীতিবিরোধী সমাজ গঠন করা সহজ হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেবল প্রতিকারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা নয় সবার মনে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা জাগ্রত করতে হবে।
সভাপতির বক্তেব্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, দেশের উন্নয়নে বড় বাধা দুর্নীতি, যা নিয়ন্ত্রণে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। দুর্নীতি দমনে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই, নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি না করলে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত দুর্নীতির অভিনব পদ্ধতি অনুসরণ করছে দুষ্কৃতিকারীরা। এর সাথে আমাদের দুর্নীতি দমন কার্যক্রম প্রতিনিয়ত নতুন ভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাছাড়া জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। এর আগে, সকাল ৮টায় জাতীয় পতাকা এবং দুদকের পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত গেয়ে, বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে কমিশনের সব মহাপরিচালককে সঙ্গে নিয়ে সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। পরে দুদকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
পিপলনিউজ/এসসি
ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com