ঢাকা, বাংলাদেশ ১২ জুলাই, ২০২৫

আসাদের পতনে জোড়ালো বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

আসাদের পতনে জোড়ালো বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

সংগৃহীত

Publish : 04:27 AM, 10 December 2024.
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

বিদ্রোহী যোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। আসাদের দেশ ছাড়ার পর রবিবার (৮ ডিসেম্বর) নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তার প্রতিক্রিয়া জানান। এ ছাড়া রাশিয়া বাশারের দেশত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রবিবারই এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাশার আল-আসাদের দেশ ত্যাগের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেয়নি রাশিয়া। 

এদিকে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাশিয়ার সমর্থন হারিয়ে তার দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তিনি আরো বলেন, আসাদ চলে গেছে, তার রক্ষক ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে থাকা রাশিয়া, তাকে আর রক্ষা করতে আগ্রহী ছিল না।

অন্যদিকে সিরিয়া পরিস্থিতির দিকে যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে নজর রাখছে বলে হোয়াইট হাউস বিবৃতি দিয়েছে। রবিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরিয়ার নজিরবিহীন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তার দল সিরিয়ার নজিরবিহীন এই ঘটনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে এ বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছেন।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) আক্রমণের মুখে সিরিয়ার ‘স্বৈরশাসক’ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এর ফলে মাত্র ১২ দিনে পতন ঘটলো সিরিয়ার আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের এবং বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলের।

এর আগে গত শুক্রবার সিরিয়ায় যখন বিদ্রোহীদের অভিযান তুঙ্গে তখন ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, সিরিয়া একটি বিশৃঙ্খল রাষ্ট্র। দেশটি আমাদের বন্ধু নয়। সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু করার নেই। এটা আমাদের লড়াই নয়। যারা লড়ছে, তাদের লড়তে দিন। এর মধ্যে যুক্ত হওয়ার দরকার নেই।

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন। তবে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।

যদিও ২০১৫ সালে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া। সে বছর সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় তারা। এরপর বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এবং ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারো তৎপর হয়ে উঠে। এরই একপর্যায়ে সম্প্রতি বিদ্রোহীরা হামলা শুরু করে এবং এই হামলার মুখে নাটকীয়ভাবে দামেস্ক ছেড়ে পালালেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। রবিবার দামেস্ক ‘মুক্ত’ করার ঘোষণা দিল বিদ্রোহীরা। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে কার্যত সিরিয়ায় দীর্ঘ ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটল।

পদত্যাগ করে সিরিয়া ছেড়েছেন বাশার আল-আসাদ : রাশিয়া

বিদ্রোহীদের তড়িৎগতির আন্দোলনের মুখে সিরিয়ার সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ ও সিরিয়া ছেড়ে চলে গেছেন বাশার আল-আসাদ। তবে সিরিয়া ছাড়ার আগে নিজ গন্তব্য সম্পর্কে কাউকে কোনো তথ্য জানাননি তিনি।

রবিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার বিষয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেছেন বাশার আল-আসাদ।

সিরিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, সেই বিষয়ে বিবৃতিতে কোনো তথ্য জানায়নি রাশিয়া। বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাশার আল-আসাদের দেশ ত্যাগের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেয়নি রাশিয়া। তবে তিনি দেশ ছেড়েছেন।

মন্ত্রণালয় বলেছে, বাশার আল-আসাদ ও সিরীয় আরব প্রজাতন্ত্রের ভূখণ্ডে সশস্ত্র সংঘাতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আলোচনার ফল হিসেবে তিনি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশনা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন। রাশিয়া এই আলোচনায় অংশ নেয়নি। সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক সব ঘাঁটিকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে রুশ কোনো ঘাঁটিতে গুরুতর হুমকি নেই। 

রাশিয়া বলেছে, সিরিয়ার সব বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে মস্কো। একই সঙ্গে সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

আসাদের পতনে জোড়ালো বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

বাশার আল-আসাদের পতনের পর বেশ জোড়ালো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। 

চীন: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, বেইজিং সিরিয়ার পরিস্থিতির উন্নয়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আশা করছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। চীন সরকার নিরাপদে ও সুশৃঙ্খলভাবে সিরিয়া ছাড়তে ইচ্ছুক চীনা নাগরিকদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমরা সিরিয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিরিয়ার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমানে সিরিয়ায় চীনা দূতাবাস রয়েছেন এবং আমরা প্রয়োজনে চীনা নাগরিকদের সম্পূর্ণ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখব।

জার্মানি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক আল-আসাদের পতনকে সিরিয়ার জনগণের জন্য আসাদের পতনকে ‘বড় স্বস্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, আসাদের পতন সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষের জন্য একটি বড় স্বস্তি। দেশটি এখন মৌলবাদীদের হাতে পড়বে না।

ইসরায়েল: ইসরায়েলি প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি অধিকৃত গোলান মালভূমির হারমন পর্বতে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ নবায়নের কথা বএলছেন। সেই সঙ্গে সিরিয়ার সাথে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির ভিত্তিতে একটি নতুন প্রতিরক্ষা লাইন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা এখন আল-কায়েদা ও আইএসআইএল-এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে।

প্রসঙ্গত, সিরিয়ার গোলান মালভূমির বেশিরভাগ এলাকা ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল দখল করে নেয় এবং ১৯৮১ সালে তা দখল করে নেয়।

পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে। সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পর গোলান মালভূমির সম্প্রদায় এবং ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাফার জোন এবং তার প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বেশ কয়েকটি জায়গায় বাহিনী মোতায়েন করেছে।

ইতালি: ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, আমি সিরিয়ার পরিস্থিতির বিবর্তন গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। আমি দামেস্কে আমাদের দূতাবাস ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। জরুরি বৈঠক ডেকেছি।

তুর্কি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, সিরিয়ার সরকারের পতন ঘটেছে এবং েেশর নিয়ন্ত্রণ হাতবদল হচ্ছে। এটা রাতারাতি ঘটেনি। ২০১১ সালে গণতন্ত্রের ওপর আল-আসাদের দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ১৩ বছর ধরে দেশটি অস্থির অবস্থায় রয়েছে।

সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে দেওয়া উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করব। তিনি বলেন, নতুন সিরিয়া যেন প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি না হয়ে হুমকি দূর করে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলোকে সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। বাহরাইনের রাজধানীতে মানামা ডায়ালগ নিরাপত্তা ফোরামে গারগাশ বলেন, সিরিয়ার ঘটনাবলী রাজনৈতিক ব্যর্থতা এবং সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার ধ্বংসাত্মক প্রকৃতিরও স্পষ্ট ইঙ্গিত।

জাতিসংঘ: সিরিয়ায় জাতিসংঘের দূত গেইর পেডারসেন বলেন, আমরা এমন একটি পরিস্থিতি খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে এ থেকে রাজনৈতিক পথ পাওয়া যাবে। সেই রাজনৈতিক পথটি আগের চেয়ে অনেক আলাদা হওয়া দরকার। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া হওয়া দরকার, যা প্রত্যেককে অন্তর্ভুক্ত করে এবং যেখানে আমরা সত্যই ঐক্য, স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার দিকে মনোনিবেশ করি। অনেক ক্ষত আছে, যা সারিয়ে তোলা দরকার।

পিপলনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

আন্তর্জাতিক বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd