ঢাকা, বাংলাদেশ ২৪ মে, ২০২৫

কলেজ শাটডাউন ঘোষণা তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের

কলেজ শাটডাউন ঘোষণা তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের

সংগৃহীত

Publish : 01:14 PM, 20 November 2024.
নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবি পূরণ না করায় সবধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মহাখালী অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তারা।

শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কলেজ শাটডাউন’ কর্মসূচি দিয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সড়ক ছেড়েছেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবেন না। 

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় সোমবার সাড়ে চার ঘণ্টা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর আড়াই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সন্ধ্যায় আবার সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে নয়টার দিকে অবরোধ শেষ করে তারা ঘোষণা দেন, মঙ্গলবার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কাল সকাল থেকে কলেজ শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা (সরকার) আমাদের সঙ্গে নয়-ছয় শুরু করেছে। মুলা ঝোলানো শুরু করেছে। কিন্তু আমরা আর মুলা খেতে চাই না। তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার থেকে কোনো ধরনের পাঠদান কার্যক্রম চলবে না। কলেজে শাটডাউন কর্মসূচী পালন করা হবে। একইসঙ্গে অবরোধ কর্মসূচী চলমান থাকবে। এর আওতায় সড়ক পথ এবং রেলপথ থাকবে।

এদিকে সোমবারের অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধের পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে প্রায় সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মহাখালী উড়ালসড়ক ও এর নিচের বিমানবন্দর সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। দিনভর চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া সাধারণ যাত্রীরা।

অবরোধের শুরুতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে কমলাপুরগামী একটি ট্রেন দ্রুতগতিতে মহাখালী রেলক্রসিং অতিক্রম করে। রেলপথ অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা তখন ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রেনে পাথর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে ট্রেনে থাকা কয়েকজন যাত্রী আহত হন এবং ট্রেনের কিছু জানালার কাচ ভেঙে যায়।

বেলা সাড়ে ১১টায় অবরোধ শুরুর পর বিকাল চারটার দিকে কর্মসূচি শেষ করেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা সড়ক ও রেলপথ ছেড়ে মিছিল নিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে চলে যান। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তখন মাইকে বলা হয়, শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা আলোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে গেছেন। সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা পরে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে। শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর যানবাহন ও ট্রেন চলতে শুরু করে।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আবার তিতুমীর কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কমিশন গঠনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ জন্য তারা আবার রাস্তায় নেমেছেন।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মহাখালী আমতলীর দিকে রওনা হন। সাড়ে ১১টার দিকে আমতলীতে পৌঁছে শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন। পরে রেলপথ অবরোধ করতে গেলে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা রেললাইনে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন দ্রুতগতিতে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছায়। শিক্ষার্থীরা ট্রেনটিকে লাল নিশানা দেখিয়ে থামার সংকেত দেন; কিন্তু ট্রেনটি ছুটতে থাকে। শিক্ষার্থীরা তখন রেললাইন ছেড়ে সরে যান। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ তখন চলন্ত ট্রেনে পাথর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে ট্রেনের ভেতরে থাকা বেশ কিছু যাত্রী আহত হন।

শিক্ষার্থীদের অবরোধে বনানী থেকে তেজগাঁও ও ফার্মগেট এবং মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।

দিনভর অবরোধ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকেই আবার কলেজের সামনের সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাফায়েত শফিক জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চারজন প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে নয়টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। আলোচনায় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত মঙ্গলবার সকাল থেকে কলেজ শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে কলেজে কোনো ধরনের কার্যক্রম চলবে না, শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজ থেকে তিতুমীর কলেজকে পৃথক (আলাদা) করতে হবে। ২. তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করতে হবে। এবং ৩. তিতুমীরকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।

পিপলনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

রাজধানী বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd