ঢাকা, বাংলাদেশ ২৪ মে, ২০২৫

সাড়ে তিন মাস পর প্রাণবন্ত ঢাবি

সাড়ে তিন মাস পর প্রাণবন্ত ঢাবি

সংগৃহীত

Publish : 10:08 AM, 24 September 2024.
ঢাবি প্রতিনিধি :

দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস পর রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) খুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লম্বা বিরতির পর প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আন্দোলনের পর ক্লাসরুমের পরিবেশ কেমন হবে, তা নিয়ে অনেকের মাঝে কিছুটা সংশয় তৈরি হলেও প্রায় সকল বিভাগেই ক্লাস হয়েছে নির্ঝঞ্ঝাটভাবেই। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরাও।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষকদের আন্দোলন এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাস বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই সময়ের মধ্যে দেশে অনেককিছু বদলে গেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে বিশবিদ্যালয়ের বিভিন্ন অঙ্গনেও। বিশ্ববিদ্যালয় খোলায় নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। তবে সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ছিল বেশ প্রাণোচ্ছল। যদিও কয়েকটি বিভাগে এখনও শিক্ষার্থীদের বেশকিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে অসন্তোষের খবরও পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতোই।

দীর্ঘ সময় প্রাণহীন অবস্থায় থাকা কলাভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, আইবিএ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রাঙ্গণ ছিল শিক্ষার্থীদের পদচারনাণায় মুখরিত ছিল সকাল থেকেই। ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভীড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোই ট্রিপ দেয় নির্দিষ্ট সময়মতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় ঢাবির রাজনৈতিক প্রাণকেন্দ্র মধুর ক্যান্টিনে অন্যান্য সময়ের মতো ভীড় দেখা যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিন হিসেবেই ব্যবহার করছেন এটিকে। ক্যাম্পাস শ্যাডো, মল চত্বরও ছিল শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত। 

 এরমধ্যে কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ক্লাস বর্জন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় কঠোর অবস্থানের কারণে বাইরের লোকজনের আনাগোনা অনেকাংশেই কমে এসেছে।  

তবে দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় নতুন করে সেশন জটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীদের অনেকে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক রহমান মনে করছেন, সেশন জটে পড়লে চাকরির ক্ষেত্রে তিনি পিছিয়ে পড়তে পারেন। তারেক বলেন, তিন মাসের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এখন শুনছি সেমিস্টারে ছয় মাসই ক্লাস হবে। এতে আমার মতো চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষতি হচ্ছে। ক্লাস চার মাসে কমিয়ে আনলে ভালো হতো। 

নিরাপত্তা নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছেন কেউ কেউ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম দ্বিরা খান বলেন, আমি আগে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আবার ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার পরিস্থিতি ঠিক নেই। মব জাস্টিসের নামে যা হচ্ছে, তাতে নিজেকে নিরাপদ বোধ করছি না। 

লম্বা সময় পর ক্যাম্পাসে ফিরে শিক্ষকদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনও দেখছেন কেউ কেউ। মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারাহ জাহান শুচি বলেন, অনেকদিন পর ক্লাসে আসতে পেরে ভালো লাগছে। ক্লাসের পরিবেশও বেশ ভালো। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারছে। শিক্ষকরাও অনেক ইতিবাচক মানসিকতা দেখাচ্ছেন। আন্দোলনের পর ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে একটা ভীতি ছিল। তবে এখানে সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হচ্ছে। 

সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরের শিক্ষকদের মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে প্রথম দিন এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কথা জানা যায়নি। 

প্রথম দিন ক্লাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাসে কথা বলতে পারছে এটি অনেক ইতিবাচক। শিক্ষকরাও অনেকটাই নমনীয়। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং ব্যবহার বেশ ভালো ছিল। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা বোধ করছি না। তবে অনেক বিভাগেই এখনো অনেক ঝামেলা চলছে বলে শুনেছি। ওই শিক্ষক আরো বলেন, প্রায় ত্রিশোর্ধ্ব বিভাগ আছে যেখানে এখনো অভ্যন্তরীণ অনেক জটিলতা রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো দ্রুতই সমাধান হওয়া উচিত। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে তাদের দাবি-দাওয়া শোনা, তাদের সমস্যাগুলো জানা। বাকি বিভাগগুলোরও উচিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আয়োজন করা। 

ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। উপাচার্যসহ আমরা বেশ কয়েকটি অনুষদে ঘুরেও দেখলাম ক্লাস কার্যক্রম। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্বরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। খুব দ্রুতই আমাদের নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাসও আমরা শুরু করে দেবো।

প্রথম দিনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে গিয়েছিলেন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, আন্দোলনের ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্ট ট্রমা কাটাতে দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উপাচার্য বলেন, ছাত্র-শিক্ষক সবাই একটা কঠিন মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতিতে এসেছে। আমরা সেই শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উত্তরণে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিছু দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সেটিও আমরা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।

গত ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়। এরপর কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে ওই মাসের ১৭ তারিখ হলসহ সবকিছু বন্ধ করে দেয় সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে ৭ আগস্ট থেকেই হলে উঠতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে হলে উঠলেও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। 

পিপলনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
[email protected]

শিক্ষা বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]

©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || VOD Bangla.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd